শুক্রবার, ২৭ Jun ২০২৫, ১০:৪২ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

ক্যাম্পে শিশুদের জন্য মিয়ানমারের আবহ তৈরিতে যত চেষ্টা

ভয়েস নিউজ ডেস্ক:

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শিশুরা ছবি আঁকবে। তাদের গ্রামের বাড়ির বর্ণনা দিয়ে বলা হয়েছে ছবি আঁকতে। সবাই যে ঘর আঁকলো সেগুলোর একটা দরজা, কেউ একটা পূর্ণাঙ্গ বাড়ি আঁকলো না। এক ঘর, এক দরজা। কারণ তাদের চিন্তার মধ্যে রয়েছে ক্যাম্পের একেকটি ঘর। তারা মিয়ানমারের গ্রাম মনে করতে পারে না। তাদের আবারও সেখানকার পথঘাট ও বাড়ির ছবি দেখানো হলো, গল্প করা হলো, তারপর একটা পূর্ণাঙ্গ বাড়ি আঁকার চেষ্টা করলো, কিন্তু তবু সেটি কোনও না কোনোভাবে ক্যাম্পের ঘরের মতোই হয়।

মিয়ানমারে হামলা-অগ্নিসন্ত্রাসে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে প্রাণ বাঁচতে তারা এই দেশে আশ্রয় নিয়েছে। এটা ক্যাম্প, যেখানে তাদের সংকুচিত সুবিধার মধ্যে মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা হয়। সব সুবিধা ক্যাম্পে থাকে না। এসব বুঝে বড় হচ্ছে মিয়ানমার থেকে এসে উখিয়ায় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শিশুরা। তারা যেন নিজ দেশটাকে মনে রাখতে পারে, যেন ভেতরে ভেতরে ফিরে যাওয়ার তাগিদ থাকে, যেন ফিরে গিয়ে হুট করে সব নতুন মনে না হয়—এ জন্য নানাবিধ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। শিশুরা তাদের নিজের ফেলে আসা দেশটাকে একটু হলেও চিনে রাখুক।

বাংলাদেশ সরকার ও জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার যৌথ ফ্যাক্টশিটের গত জানুয়ারির হিসাব বলছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বর্তমান জনসংখ্যা ৯ লাখ ৭৫ হাজার ৩৫০। এর মধ্যে ৫২ শতাংশ শিশু। সেই শিশুদের মধ্যে ৫ বছর থেকে ১১ বছরের ২১ শতাংশ আর ১২ বছর থেকে ১৭ বছর বয়সী ১৫ শতাংশ শিশুর উল্লেখ আছে। তারা যেন আশ্রয়দাতা দেশের জন্য বোঝা হয়ে না দাঁড়ায়, সেই শিশুরা যেন আত্মবিশ্বাস নিয়ে বড় হয় এবং নিজের দেশে ফেরার তাগিদ বোধ করে সে কারণেই নানাবিধ কর্মসূচি নিয়মিত চালানো হয়।

সরকার ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, অন্তত পাঁচটি কারণে ক্যাম্পের মধ্যে মিয়ানমারের স্থানীয় আবহ ধরে রাখা দরকার বলে মনে করেন তারা। মিয়ানমারে ফিরে যেতে তাদের মানসিক প্রস্তুতি তৈরি করতে, ফিরে গিয়ে যেন তাদের সেখানে হোঁচট খেতে না হয়, জন্মস্থানে ভাষাগত পার্থক্য নিয়ে যেন ঝামেলায় না পড়ে, এখানে মূলস্রোতে যেন মিশে না যায়, ক্যাম্প আর দেশের মধ্যে যে পার্থক্য সেটা যেন তাদের মাথায় থাকে- সেসব কীভাবে নিশ্চিত করা যাবে সে অনুযায়ী কর্মসূচি হাতে নেওয়ার কথাও জানান তারা।

যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তার একটি হলো তাদের নিজ কারিকুলামে শিক্ষার ব্যবস্থা করা। রোহিঙ্গা শিশুদের নিজের ভাষায় শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে ইউনিসেফ ও উন্নয়ন অংশীদাররা ‘মিয়ানমার কারিকুলাম পাইলট (এমসিপি) প্রকল্প’ চালু করে। এখন পর্যন্ত আশ্রয়শিবিরে মোট লার্নিং সেন্টার আছে ৫ হাজার ৮৯১টি। ২০২৩-এর হিসাবে মোট শিক্ষার্থী প্রায় সাড়ে ৩ লাখ। এর মধ্যে আড়াই লাখের বেশি শিশু মিয়ানমারের শিক্ষাক্রমের আওতায় এসেছে। শুরুতে বাংলা মাধ্যমে পড়ানো হলেও ২০২২ সালের জুলাই থেকে এখানকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়ানো হচ্ছে মিয়ানমারের শিক্ষাক্রম (কারিকুলাম) অনুসরণ করে।

লাম্বাশিয়া ক্যাম্পের এক রোহিঙ্গা সংগঠক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমাদের কেউ এখানে থাকতে চায় না। সম্মানের সঙ্গে পাঠানোর ব্যবস্থা করে দেওয়া হলে আমরা এখনই ফিরে যাবো। আমরা পরবর্তী প্রজন্মকে ভাষা, পোশাক, সংস্কৃতি শেখানোর ব্যবস্থা করি। যারা ক্যাম্প পরিচালনা করেন তারা ভয় পান যদি আমরা না যেতে চাই। সেই কারণে তারাও মিয়ানমারের আবহ ধরে রাখতে চান। ক্যাম্পের ভেতরে নানা নির্দেশনা আমাদের ভাষাতেই দেওয়া হয়।

ক্যাম্পের শিশুদের মিয়ানমারের স্থানীয় পরিবেশ ও সংস্কৃতির আবহের মধ্যে রাখতে আমরা নানা উদ্যোগ নিচ্ছি উল্লেখ করে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মিজানুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, তারা সেখানকার মতো স্কুলের পোশাক যেন পরে যেতে পারে সেই ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, প্রতিযোগিতা, লাইফ স্কিলের জন্য ভোকেশনাল ট্রেনিং ফ্রেমওয়ার্ক করছে সরকার। আমরা শুরু থেকেই বলছি, এত বড় কিশোর-তরুণ জনগোষ্ঠীকে অলস রাখা ঝুঁকিপূর্ণ। তাদের হতাশা আমাদের দেশের জন্য ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে যদি সঠিকভাবে পরিচালনা না করা যায়। মোট কথা আমরা তাদের সবকিছুকেই মিয়ানমারের আদলেই রাখতে চাই।

ভয়েস/আআ/সূত্র: বাংলাট্রিবিউন

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION